ঝিনুকের উপকারিতা ও অপকারিতা-ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করার উপায়
ঝিনুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানার সুযোগ করে দিতে পারে এবং তার সাথে আরও জানতে পারবেন ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করার উপায় সম্পর্কে।
ঝিনুকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খনিজ উপাদান থাকে। যেগুলো শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ সক্ষম। ঝিনুকে থাকা ভিটামিন এবং আয়রন শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রোগ সারাতেও সক্ষম।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ঝিনুকের উপকারিতা ও অপকারিতা
ঝিনুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
শরীরের জন্য অনেক অনেক উপকারী ঝিনুক। কেননা ঝিনুকে থাকা প্রোটিন, আয়রন, চর্বি, ক্লোরাইড, কার্বোহাইড্রেট, ফসফরাস এবং লবণ শরীরের জন্য অনেক কার্যকরী। তাছাড়া ঝিনুকের মধ্যে কোন উচ্চ ক্যালরি না থাকার কারণে ঝিনুক খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। কেননা সেই ঝিনুকের মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা অন্য কোন মাংসের তুলনায় একটু বেশি পরিমাণে।
ঝিনুক যেহেতু প্রাকৃতিক খাবার সেহেতু এটি শরীরের জন্য অনেক স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। তবে আপনাকে অবশ্যই ঝিনুক ভালো করে রান্না করে খেতে হবে। যদি আপনি ভালো করে রান্না করে খেতে না পারেন। তাহলে আপনার শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, ঝিনুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এবং ঝিনুকের প্রজনন পদ্ধতি সম্পর্কে। তার সাথে আরো জানব ঝিনুক থেকে মুক্ত চাষ করার উপায় সম্পর্কে।
ঝিনুকের উপকারিতা
ঝিনুকের উপকারিতা এবং অপকারিতা অনেক। তবে তার মধ্যে ঝিনুকের উপকারিতাই বেশি। চলুন আজকেই আর্টিকেল এর মাধ্যমে ঝিনুকের উপকারিতা সম্পর্কে জানি। ঝিনুকের মাংস অনেক সুস্বাদু এবং তার পাশাপাশি ঝিনুকের মাংসে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান ও ভিটামিন বিদ্যামান। যার শরীরের রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। কথা না বাড়িয়ে চলুন, ঝিনুকের উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক-
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। আপনি যদি নিয়ম করে সুন্দরভাবে রান্না করে ঝিনুক খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তাছাড়া শরীরের শারীরিক গঠন ঠিক থাকবে।
- শরীরের হাড়ের গঠন মজবুত রাখতে বা হাড় সুস্থ রাখতে ঝিনুকের কার্যকারিতা ব্যাপক। তবে অবশ্যই আপনাকে ঝিনুক নিয়ম মেনে খেতে হবে। তাছাড়াও তার পাশাপাশি দাঁতের মাড়ি এবং হাড়ের টিস্যু গুলো শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।
- তাছাড়াও ঝিনুকে থাকা ভিটামিন শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। কেননা ঝিনুকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বিদ্যামান। তাই ভিটামিন এ অভাবে যে সকল রোগ হয়ে থাকে সে সকল রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে ঝিনুক।
- তাছাড়া ও ঝিনুকে থাকা প্রোটিন শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। তার পাশাপাশি কাজ করার ক্ষমতা এবং শরীরের শারীরিক গঠন ঠিক থাকে।
- শরীরে থাকা বিভিন্ন ধরনের বাতের ব্যথা সারাতে ব্যাপক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে ঝিনুকের মাংস। তাছাড়াও স্নায়ুর বিকাশ ঘটায়।
যেহেতু ঝিনুকের মাংস শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করে থাকে তার পাশাপাশি শরীরের শারীরিক গঠনের সাহায্য করে। তাই অবশ্যই ঝিনুক নিয়ম মত খাওয়া উচিত। অন্যদিকে গর্ভবতী মায়েদের ঝিনুক খেলে নিজের স্বাস্থ্য এবং সন্তানের স্বাস্থ্য দুটো ঠিক থাকে। চলুন তাহলে এবার জেনে নেই, ঝিনুক থেকে মুক্ত চাষ করার উপায়
ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করার উপায়
অনেকেই ঝিনুক উত্তোলন করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। তবে খুব সহজেই ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করা যায়। আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি খুব সহজে জেনে যাবেন। কিভাবে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করা যায়। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে আজকে জেনে নেই, ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করার উপায় সম্পর্কে-ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ একটি সহজ পদ্ধতি।
আরো পড়ুনঃ চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
আপনি যদি মুক্ত চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে সর্বপ্রথম একটি সুন্দর পুকুর নির্বাচন করতে হবে। যে পুকুর মুক্তা চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মতে, বাংলাদেশে কিছু চাষীরা বাণিজ্যিকভাবে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করতেছে। আপনিও চাইলে এর আওতায় আসতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ভালো প্রজাতির ঝিনুক সংগ্রহ করতে হবে।
আপনি যেকোন খাল-বিল বা নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করে চাষাবাদ করতে পারেন অথবা মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করে চাষাবাদ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ঝিনুক চাষ করার আগে অবশ্যই আপনাকে কিভাবে ঝিনুক চাষ করতে হয় সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিলে ভালো হবে। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আপনি খুব সহজেই যে পুকুর ঝিনুক চাষের জন্য উপযোগী।
সেই পুকুরে ঝিনুক চাষ করতে পারবেন এবং সেখান থেকে মুক্তা সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে পুকুরের পানিতে একটা করে খুঁটি দিতে হবে। অবশ্যই একটি খুঁটি থেকে আরেকটি খুঁটির দূরত্ব বজায় রাখবেন। পরবর্তীতে আপনি নেট বা জালের ভিতরে একসাথে ৭ থেকে ৮ টি ঝিনুক রাখতে পারবেন।
অবশ্যই পুকুরের পানি থেকে দুই ফুট নিচে খুঁটির সঙ্গে জালটি বেঁধে দিয়ে একটি ঝিনুকের সাথে আরেকটি ঝিনুকের দ্রুত বজায় রেখে রাখতে হবে। পরবর্তীতে ঝিনুকের যখন প্রাপ্ত বয়স হয়ে যাবে। তখন সেই ঝিনুক থেকে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি মুক্তা আপনি উত্তোলন করতে পারবেন। তবে যে ঝিনুকের ভিতরে কোষ ভালো অবশ্যই আপনাকে সেই ঝিনুক চাষাবাদ করতে হবে।
ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য
একটা ঝিনুক থেকে ৭ থেকে ৮ মাস পর থেকেই মুক্তা সংগ্রহ করা যায়। তাছাড়াও আপনি সেই মুক্তা বাজারজাত করে সেখান থেকে ভালো একটা আয় করতে পারবেন। মুক্তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অলংকার তৈরি করা হয়। যার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা অলংকার তৈরি প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় মুক্তা।
তবে আপনাকে একটা বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন পুকুরের পানি তাপমাত্রা সবসময় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকে। তাহলে সেই পানিতে মুক্তা চাষ করা সম্ভব। আর এভাবেই আপনি খুব সহজেই আপনার বাড়ির পাশে থাকা পুকুরটিতে মুক্তা চাষ করে এবং সেগুলো বাজারজাত করে টাকা আয় করতে পারবেন।
ঝিনুকের অপকারিতা
ঝিনুকের উপকারিতা ও অপকারিতা মধে এবার ঝিনুকের অপকারিতা জেনে নেই। ঝিনুক শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তবে সব কিছুরই কিছু ক্ষতিকর দিক আছে। আপনি যদি সঠিকভাবে ঝিনুক খেতে না পারেন তাহলে আপনার শরীরে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই আপনাকে ঝিনুক সঠিকভাবে রান্না করে খেতে হবে। চলুন তাহলে আজকে জেনে নেই-
ঝিনুকের অপকারিতা গুলো- ঝিনুকের উপকারিতা থাকলেও যেহেতু ঝিনুকের ক্ষতিকর দিক আছে। তাহলে অবশ্যই ঝিনুক আপনাকে ভালো করে রান্না করে খেতে হবে। ঝিনুক কাঁচায় খেলে ঝিনুকে থাকা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু শরীরের মধ্যে চলে যায়। যার ফলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাই যারা কাঁচা ঝিনুক খেতে পছন্দ করেন তারা অবশ্যই কাঁচা ঝিনুক খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
অন্যদিকে ঝিনুক যেহেতু পানিকে পরিষ্কার করে সেহেতু পানিতে থাকা জীবাণুগুলো বা ভাইরাসগুলো ঝিনুক নিজের ভেতরে জমিয়ে রাখে। আপনি যদি ঝিনুক ভালো করে রান্না করে খেতে না পারেন তাহলে সেই ভাইরাসগুলো আপনার শরীরের ভেতরে চলে যাবে। যার ফলে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে পানিতে থাকা অনুজীবগুলো শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ।
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েরা এবং যে মায়েরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়ান। তারা অবশ্যই ঝিনুক খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আপনার যদি ঝিনুক খাওয়ার পর শরীরের মধ্যে এলার্জি লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে আপনাকে অবশ্যই ঝিনুক খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেহেতু ঝিনুকে প্রচুর পরিমাণে জিংক রয়েছে। সেই জিংক শরীরের আয়রনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
তাই ঝিনুক খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে ভালো করে রান্না করে খেতে হবে এবং আপনি যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঝিনুক খেতে পারেন। আশা করি,ঝিনুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
ঝিনুকের ভিতরে মুক্তা প্রজনন
ঝিনুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলাম এবং আরো জানলাম ঝিনুক থেকে মুক্ত চাষ করার উপায় সম্পর্কে। তাহলে চলুন এবার জেনে নেই, ঝিনুক থেকে কিভাবে মুক্তা প্রজনন হয়। আসলে ঝিনুক থেকে মুক্তা প্রজননের একটি সহজ ও সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। ঝিনুকের ভেতরে প্রথমে কোন বালুকণা অথবা কোন ভাসমান খাদ্য কণা অনুজীব হিসেবে প্রবেশ করেন।
পরবর্তীতে সেই বালুকণা অথবা খাদ্য কণা ঝিনুকের কোণে আশ্রয় নেয়। যখন ঝিনুকের খোলস দেখে যে তার ভিতরে কোন বাইরে অণুজীব প্রবেশ করেছে তখন ঝিনুকের খোলসটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেই বালুকণা অথবা খাদ্য কণার ওপর স্তর পড়ে পড়ে আস্তে আস্তে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটা মুক্তাই রূপান্তর হয়। আরে ঝিনুক থেকে মুক্তা প্রজনন প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সময় সাপেক্ষ। আর আপনি সেই মুক্তা সংগ্রহ করে বাজারজাত করতে পারবেন এবং সেখান থেকে ভালো টাকা আয় করতে পারবেন।
ঝিনুকের গঠন দেখতে কেমন
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে ঝিনুকের গঠন বা দেখতে কেমন। চলুন তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। ঝিনুক হল জলজ প্রাণী। ঝিনুক দুই খোলস নিয়ে গঠিত। তবে ঝিনুকের আছে মলদ্বার, পাকস্থলী, ফুলকা, খোলস, মুখ এবং কপাট ইত্যাদি অংশ নিয়ে গঠিত। ঝিনুক দেহের ভিতরে ফুলকার সাহায্যে খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে থাকে এবং সেগুলোকে পাকস্থলীতে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে হজম প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে সেগুলো বজ্র পদার্থ হিসেবে দেহ থেকে নিঃসরণ করে দেয়। এই নিঃসরণের কাজটি করে থাকে ঝিনুকে থাকা দুটি বৃক্ক। তাছাড়াও ঝিনুকে রয়েছে কয়েক স্তর বিশিষ্ট হৃদযন্ত্র । ঝিনুকে থাকা বাইরের আবরণটি খুবই শক্ত এবং এটি ভিতরে থাকা নরম মাংসকে বাইর থেকে রক্ষা করে। আর এভাবে ঝিনুক থাকা কিছু ঝাকুনি কাঠামোর মাধ্যমে খুব সহজেই খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে এবং সেগুলো হজম প্রক্রিয়া করে বজ্র পদার্থ হিসেবে নিঃসরণ করে।
ঝিনুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের শেষকথা
ঝিনুকের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং তার সাথে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করার উপায় সম্পর্কে জানতে পারলাম। আরো জানতে পারলাম ঝিনুকের গঠন এবং ঝিনুকের প্রজনন সম্পর্কে। তবে আমার পরামর্শে এটাই যে, ঝিনুক খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে সঠিকভাবে রান্না করে খেতে হবে। আপনি যদি ঝিনুক সঠিকভাবে রান্না করে খেতে না পারেন।
তাহলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এরকম আরো আর্টিকেল সবার আগে পেতে এই ওয়েবসাইটি ফলো করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url