গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান। গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়া শরীরের এবং শিশুর জন্য অনেক উপকারী এবং আরো জানতে পারবেন ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের ডাবের পানি শিশুর বৃদ্ধি বিকাশে সাহায্য করে। তাছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন পড়ে। তাই গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতীর মায়ের অবশ্যই ডাবের পানি খাওয়া উত্তম।
পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ডাবের শাঁস খাওয়ার ৭টি উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার অপকারিতা
- খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না
- ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
- ত্বকের যত্নে ডাবের পানির উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ডাব খাওয়া যাবে কি
- গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা লেখকের শেষকথা
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের সন্তানের ভ্রূণের বৃদ্ধি বিকাশের জন্য অবশ্যই পুষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। একজন গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই ডায়েট কন্ট্রোল করে চলা উচিত। আর সহজেই ডায়েট কন্ট্রোল করা যায় ডাবের পানি দিয়ে। তাছাড়াও ডাবের পানি পান করলে শরীরের পানির পরিমাণের ভারসাম্য বজায় রাখে।
তাছাড়াও ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান থাকার কারণে গর্ভবতী মায়ের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। একজন মা চায় তার বাচ্চার পূর্ণ বিকাশ। বাচ্চার পূর্ণ বিকাশের জন্য একজন মা প্রচুর পরিমাণে ক্যালরিযুক্ত খাবার এবং ভিটামিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করে থাকে। আপনি যদি আপনার শরীরে খনিজ উপাদান ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে চান তাহলে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ডাব রাখতে পারেন।
কেননা ডাবে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্লোরাইড বিদ্যমান থাকে। যেগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। তাছাড়াও গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি একজন গর্ভবতী মায়ের সন্তানের মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক, গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কেননা একজন গর্ভবতী মায়ের অনেক ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে ডাবের পানি। তাছাড়াও ডাবের পানি শরীরে সকল ক্লান্তি দূর করতে সক্ষম। সকালের সকল দুর্বলতা দূর করতে পারে এক গ্লাস ডাবের পানি। চলুন তাহলে জেনে নেই, ডাবের পানির উপকারিতা গুলোঃ
হজমে সহায়তা করেঃ একজন গর্ভবতী মায়ের পেটের হজমের সমস্যা দূর করতে পারে এক গ্লাস ডাবের পানি।
শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখেঃ গর্ভকালীন সময়ে অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক থাকে না। কিন্তু এক গ্লাস ডাবের পানি পান করলে গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
ভ্রুনের বৃদ্ধি বিকাশেঃ গর্ভবতী মায়ের ভ্রূণের বৃদ্ধি বিকাশে ব্যাপক সহায়তা করে ডাবের পানি।
গ্যাসের সমস্যা দূর করেঃ অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের পেটে গ্যাসের বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য আপনি পরিমাণ মতো ডাবের পানি খেতে পারেন।
বুকের জ্বালাপোড়া দূর করেঃ বিভিন্ন কারণে গর্ভবতী মায়েদের বুকে অনেক সময় জ্বালাপোড়া করে। আর এই জ্বালাপোড়া দূর করতে পান করা যেতে পারে ডাবের পানি।
রক্তচাপ কমায়ঃ অনেক সময় গর্ভকালীন মায়েদের বিভিন্ন কারণে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। এই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ডাবের পানি বেশ সহায়ক।
ওজন কমাতেঃ গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আপনাকে সহযোগিতা করতে পারে ডাবের পানি। কেননা ডাবের পানিতে শর্করার পরিমাণ কম থাকার কারণে শরীরের ওজন বাড়তে দেয় না। যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
শিশুর মস্তিষ্কের পূর্ণবিকাশেঃ গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা ডাবের পানি পান করলে শিশুর মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশে সাহায্য করে। তাছাড়াও মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
দুর্বলতা ও ক্লান্তি ভাব দূর করেঃ অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর যেন আর চলে না। অনেক দুর্বল লাগে। এই দুর্বলতা ভাব দূর করার জন্য এক গ্লাস ডাবের পানি যথেষ্ট। তাছাড়াও ডাবের পানি শরীরের সকল ক্লান্তি ভাব দূর করতে সক্ষম।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণেঃ গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের শরীরের ব্লাড পেসার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এক গ্লাস ডাবের পানি।
গর্ভাবস্থায় ডাবের শাঁস খাওয়ার ৭টি উপকারিতা
গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মা তার শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্য খাবারের তালিকায় অবশ্যই ডাবের পানি রাখে। অর্থাৎ একজন মা তার সন্তানের পূর্ণ বিকাশের জন্য পানি জাতীয় খাবারের তালিকায় বেশি পছন্দ করে ডাবের পানি। কেননা ডাবের পানি শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং তার সাথে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
অন্যদিকে সন্তানের পূর্ণ বিকাশের জন্য একজন মা ডাবের পানি খেতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তবে হয়তোবা আপনার জানা নেই, গর্ভাবস্থায় ডাবের শ্বাঁস শরীরের জন্য কতটুকু কার্যকরী। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, গর্ভাবস্থায় ডাবের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা গুলোঃ ডাবের পানি খাওয়ার পর ডাবের ভিতরে যে শাঁস থাকে সে শাঁস খুবই পুষ্টিকর ।
তাছাড়াও ডাবের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ও ক্যালোরি বিদ্যমান। কেননা প্রতি ২৫০ গ্রাম ডাবের পানিতে থাকে প্রায ৮.৭৫ গ্রাম পরিমাণে প্রোটিন, সোডিয়াম ৩৭. ৫ গ্রাম, পটাশিয়াম থাকে ৯০০ গ্রাম, ৮৭৫ গ্রাম ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে ২৫ গ্রাম। তাছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান বিদ্যামান থাকে ডাবের শাঁস এর মধ্যে।
অন্যদিকে একজন গর্ভবতী মায়ের যে পরিমাণ প্রোটিন, পটাশিয়াম, ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা প্রয়োজন পড়ে ঠিক সেই চাহিদাটুকু পূরণ করতে পারে ডাবের শাঁস। একজন গর্ভবতী মা যদি নিয়ম করে প্রতিদিন ডাবের শাঁস খেতে পারে তাহলে তার নিম্নোক্ত উপকারগুলো হতে পারেঃ
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃগর্ভকালীন সময়ে অনেক মায়েরা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগে। যদি নিয়ম করে প্রতিদিন ডাবের শ্বাস খাওয়া যায় তাহলে গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরে কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিবে না।
শিশুর ত্বক ঠিক রাখেঃ গর্ভবতী মা যদি নিয়ম করে ডাবের শ্বাস খেতে পারে। তাহলে গর্বে থাকা সন্তানের ত্বকের সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
ক্ষুধার চাহিদা মেটায়ঃ অনেক সময় গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের প্রচুর পরিমাণে খাবার ইচ্ছা করে। দিনে যদি ডাবের শ্বাস খাওয়া যায় তাহলে এই ক্ষুধা ভাবটা একটু কম মনে হয়। অন্যদিকে ঘন ঘন খেতে হয় না।
পানির চাহিদা মেটায়ঃ ডাবের পানি যেমন গর্ভবতী মায়ের পানি চাহিদা মেটায় ঠিক তেমনি ভাবে ডাবের শ্বাস শরীরের পানির চাইতে মেটাতে বেশ সক্ষম।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ গর্ভে থাকা সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়ক হিসেবে কাজ করে ডাবের শাঁস। তবে অবশ্যই আপনাকে পরিমাণ মতো ডাবের শাঁস প্রতিদিন খেতে হবে।
পেটে হজমের সমস্যা দূরঃ ডাবের পানির মতো ডাবের শাঁস শরীরের পেটের হজমের সমস্যা দূর করতে পারে খুব সহজেই।
ওজন কমাতে এবং ডায়েট কন্ট্রোলেঃ অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেয়ে যায়। আর এই সময়ে ডায়েট কন্ট্রোলে আপনি পান করতে পারেন ডাবের পানি। তার পাশাপাশি ডাবের শাঁস আপনার শরীরের ওজন কমাতে বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ডাবের পানি খাওয়ার পর আপনি ডাবের শাঁস খেতে পারেন এতে করে আপনি বেশ উপকৃত হবেন।
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
একজন গর্ভবতী মায়ের সন্তানের পূর্ণ বিকাশের জন্য যেহেতু গর্ভবতী মা খাদ্য তালিকায় বেশি পছন্দ করে ডাবের পানি। কেননা ডাবের পানি পাড়ে আপনার সন্তানের পূর্ণ বিকাশে এবং আপনার শরীরের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে। শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পানি জাতীয় খাবার খাওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এক গ্লাস ডাবের পানি আপনার শরীরে এবং গর্ভবতী মায়েদের শরীরে পানি চাহিদা পূরণ করতে পারে।
যদি আপনি নিয়ম করে ডাবের পানি খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি অবশ্যই নিয়ম মেনে খেতে হবে। একজন গর্ভবতী মা গর্ভকালীন সময়ে সকালে প্রতিদিন একগ্লাস করে ডাবের পানি খেতে পারে। এতে করে গর্ভবতী মায়ের শরীরের সকল দুর্বল ভাব দূর হয়ে যায় এবং শরীরের যত দূর্বলতা সবকিছু কেটে যায়। তাছাড়াও ডাবের পানি খাওয়ার পর শরীরের সারাদিনের সকল ক্লান্তি দূর করে থাকে।
তাই একজন গর্ভবতী মা যখন সারাদিনের ক্লান্তি ভাব দূর করতে চাবে তাহলে অবশ্যই সব কাজ শেষ করে এক গ্লাস ডাবের পানি খেতে পারে। প্রতিদিন একজন গর্ভবতী মা দুই থেকে তিনটা ডাবের পানি খেতে পারে। তবে আপনি যদি বেশি পরিমাণে ডাবের পানি খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনি সঠিক মাত্রায় যদি ডাবের পানি খেতে চান তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকবেন।
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কিন্তু উপকার দিক থাকলেও সব কিছুরই ক্ষতিকারক দিক থাকে। ঠিক তেমন গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা থাকলেও আছে কিছু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর দিক। একজন গর্ভবতী মা যদি বেশি পরিমাণে ডাবের পানি পান করে তাহলে তার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় বেশি পরিমাণে ডাবের পানি পান করার ফলে গর্ভবতী মায়েদের শরীরের ওজন অনেকাংশেই কমে যায়। অন্যদিকে ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে শরীরে এই উপাদানগুলোর পরিমাণ চাহিদার তুলনায় বৃদ্ধি পায়। যেহেতু ডাবের পানি শরীরের রক্তচাপ কমিয়ে আনে।
তাই যদি পরিমাণের তুলনায় বেশি ডাবের পানি খাওয়া যায় তাহলে অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের শরীরের রক্তচাপ একেবারেই কমে আসতে পারে। তাছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করার ফলে। তাই আমার পরামর্শে এটাই যে, গর্ভাবস্থায় একজন মা তার সন্তানের বিকাশ এবং শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পরিমাণ মতো ডাবের পানি পান করা উচিত। তবে অবশ্যই ডাবের পানি পান করার পূর্বে একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা
অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকে যে খালি পেটে ডাবের পানি খেলে কি হয় অথবা খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা কি কি। চলুন তাহলে আজকে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক, খালি পেটে ডাবের পানি খেলে শরীরে পানির চাহিদা পূর্ণ হয়। যদি ঘুম থেকে উঠে সকালে কোন কিছু খাওয়ার আগে এক গ্লাস ডাবের পানি খেতে পারেন তাহলে শরীরের জন্য তা বেশ উপকারী।
কেননা ডাবের পানি শরীরের দুর্বলতা দূর করতে সক্ষম। অন্যদিকে ডাবের পানি শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়ামের যোগান দিয়ে থাকে। তাছাড়াও শরীরের পানির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে ডাবের পানি। তবে খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়া বেশি উত্তম। খালি পেটে ডাবের পানি খেলে পেটের হজমের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
ডাবের পানিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়াও শরীরের ত্বক ঠিক রাখতে ব্যাপক সহায়ক ডাবের পানি। শরীরের ওজন নিয়ে চিন্তিত। আর এই ওজন আপনি কমাতে চাচ্ছেন তাহলে অবশ্যই আপনি ওজন কমাতে পানি জাতীয় খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন ডাবের পানি। কেননা ডাবের পানিতেই শর্করার পরিমাণ একটু কম থাকে। যা আপনার শরীরের ওজন কমাতে এবং ডায়েট কন্ট্রোলে সাহায্য করবে। তাই বলা যেতে পারে, খালি পেটে ডাবের পানি খাবার উপকারিতা ব্যাপক।
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। অনেকেই গর্ভকালীন সময়ে ভেবে থাকে যে গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে আর কি কি খাওয়া যাবেনা ? চলুন তাহলে আমরা জেনে নেই গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না ? অনেক সময় অতিরিক্ত খাবার আপনার শরীরের অসুস্থতার কারণ হতে পারে অথবা আপনার সন্তানের জন্য তা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আপনার শরীরের সুস্থতার জন্য এবং আপনার সন্তানের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বিকাশের জন্য অবশ্যই আপনাকে গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার পরিহার করতে হবে তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
কাঁচা মাছ এবং অ্যালকোহল জাতীয় পানিঃ গর্ভকালীন সময়ে একজন মাকে অবশ্যই কাঁচা মাছ অথবা আদা সিদ্ধ কোন মাছ খাওয়া যাবে না। কেননা কাঁচা মাছ আপনার সন্তানের বা আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। কাঁচা মাছে থাকা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু আপনার স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। অন্যদিকে অবশ্যই গর্ভকালীন সময়ে অ্যালকোহল জাতীয় পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা গর্ভে থাকা সন্তানের জন্য অ্যালকোহল জাতীয় পানি ক্ষতিকারক।
কাঁচা ডিমঃ অনেক সময় শরীরের পুষ্টির যোগানের জন্য অনেক গর্ভবতী মায়েরা মুরগির কাঁচা ডিম খেয়ে থাকে। ডিমের মধ্যে অনেক ধরনের পুষ্টি বিদ্যমান। তাছাড়াও শরীরে পুষ্টি ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণের জন্য ডিমের বিকল্প কিছু নেই। তবে আপনি যদি কাঁচা ডিম খেয়ে থাকেন তাহলে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কেননা কাঁচা ডিমে থাকা জীবাণু আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের এবং আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।
কাঁচা দুধ এবং কাঁচা মাংসঃ দুধ শরীরের সকল ধরনের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে থাকে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য শরীরে প্রোট্রিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য দুধের বিকল্প আর কিছুই নেই। তবে অবশ্যই কাঁচা দুধ থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে। অন্যদিকে একইভাবে আপনাকে অর্ধ সিদ্ধ বা সিদ্ধ করা। কোন মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কাঁচা মাংস তো খাওয়াই যাবে না।
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
শরীরের জন্য ডাবের পানি উপকারী পানি জাতীয় খাবার হিসাবে। শরীরের পানির চাহিদা পূরণের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে ডাবের পানি। তাছাড়াও ডাবের পানি ফ্রেশ থাকার ফলে শরীরের সকল ক্লান্তি এবং মনের সকল ক্লান্তি দূর করতেও সক্ষম। তবে অবশ্যই ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম আছে। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ডাবের পানি খেয়ে থাকেন।
তাহলে আপনার শরীরে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনাকে প্রতিদিন নিয়ম মেনে অবশ্যই ডাবের পানি খেতে হবে। প্রতিদিন একজন স্বাভাবিক মানুষ বা সুস্থ মানুষ দিনে দুইটা ডাব খেতে পারে। এতে করে শরীরের কোন সমস্যা দেখা দিবে না। তবে সকালে খেলে সবচেয়ে ভালো হয়। আপনি যদি খালি পেটে ডাব খেতে পারেন তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য বেশ কার্যকরী।
অনেকের দেখা যায় খালি পেটে ডাব খাওয়ার ফলে পেটের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় বা সৃষ্টি হয়। খালি পেটে ডাব খাওয়ার ফলে যাদের গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হয় তারা অবশ্যই সকালে খালি পেটে ডাব খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রতিদিন নিয়ম করে খাওয়ার পর একগ্লাস ডাবের পানি খেতে পারলে বেশ উপকৃত হবেন। তবে একটা পরামর্শ এই যে, রাতে অবশ্যই ডাবের পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ডাবের পানি ঠান্ডা হওয়ার কারণে রাতে ডাবের পানি খেলে বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা জনিত রোগ দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন নিয়ম করে একটা ডাবের পানি খাওয়া খুবই ভালো।
ত্বকের যত্নে ডাবের পানির উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানলাম। শুধু স্বাস্থ্যের না ত্বকের যত্নে ডাবের পানি বেশ উপকারী। কেননা ত্বকের যত্নে ডাবের পানি ব্যবহার বা পান করার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার সাথে ত্বকের এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ডাবের পানি পান করলে অথবা ত্বকের মধ্যে ডাবের পানি ব্যবহার করলে ত্বকের এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।
অনেক সময় ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ দেখা দেয়। বয়স না হয়ে যেন চেহারার মধ্যে বয়সের ছাপ। ডাবের পানি পান করার ফলে ত্বকের থেকে এই বার্ধক্যের সমস্যা দূর হয়ে যায়। তাছাড়াও ডাবের পানি পান করলে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্নি সহজেই ত্বককে নষ্ট করতে পারে না। অন্যদিকে অনেক সময় ত্বকে বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ দেখা দেয়।
এই কালো দাগ দূর করতে এবং ত্বকের প্রধান সমস্যা ব্রণ এই ব্রণ দূর করতে ব্যবহার করা যেতে পারে ডাবের পানি। যা ত্বক থেকে কালো দাগ এবং ব্রণ দুটোই দূর করতে সক্ষম। ত্বকের আদ্রতা এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা দুটোই ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে ডাবের পানি। তাই এটা বলায় বাহুল্য যে, ডাবের পানি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তার সাথে ত্বকেরও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অন্যদিকে গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পেরেছেন।
গর্ভাবস্থায় ডাব খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় ডাব খাওয়া যাবে কি ? এ প্রশ্নটা অনেকের মনে হতে পারে। গর্ভাবস্থায় ডাব খাবার উপকারিতা অনেক। কেননা সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ডাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়াও গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি শিশুর ভ্রূণের বিকাশে সাহায্য করে। ডাব শরীরের ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ক্যালোরি এবং ক্লোরাইড চাহিদা পূরণ করে থাকে। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন হয়।
কেননা গর্ভাবস্থায় যদি শরীর সুস্থ না থাকে তাহলে সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কখনোই সম্ভব না। তাই সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই ডাব খাওয়া প্রয়োজন আছে। ডাবের পানি থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গর্ভবতী মায়ের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গর্ভবতী মায়েদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে। গর্ভবতী মায়েদের ওজন ঠিক রাখতে কাজ করে থাকে ডাবের শাঁস এবং ডাবের পানি।
তাছাড়াও ডাবে থাকা বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। বাচ্চার মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশ এবং ভ্রুনের বিকাশে ডাবের পানি এবং ডাব দুটোই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে গর্ভবতী মায়েদের শরীরের পানির চাহিদা মেটায় ডাবের পানি। তাই বলা যেতে পারে, গর্ভাবস্থায় ডাব খাওয়া অবশ্যই ভালো।
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা লেখকের শেষকথা
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। তার সাথে আরো জানলাম ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, ডাবের পানি শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। যা শরীরের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে এবং শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
তবে আমার পরামর্শ এটাই যে, গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। ডাবের পানি পান করার ফলে শরীরে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদেরকে জানার সুযোগ করে দেবেন। এরকম আরো আর্টিকেল সবার আগে পেতে ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url