পাম তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
পাম তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। এই আর্টিকেলে তাহলে জানতে পারবেন পাম তেল শরীরের জন্য কতো উপকারী সেই সম্পর্কে বিস্তারিত এবং তার সাথে আরো জানতে পারবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।
পাম তেল বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত একটি তেল। কেননা পাম তেল দিয়ে তৈরি করা হয় অনেক ধরনের জনপ্রিয় খাবার। আর এই জনপ্রিয় খাবারের প্রধান উপযোগী হল পাম তেল।
পোস্ট সূচিপত্রঃ পাম তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা
- পাম তেলের পরিচিতি
- পাম তেলের পুষ্টিগুন
- পাম তেলের উপকারিতা
- পাম তেলের অপকারিতা
- পাম তেল খাওয়ার ও ব্যবহারের নিয়ম
- পাম তেল কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
- পাম তেল ও সয়াবিন তেলের মধ্যে পার্থক্য
- পাম তেল কি মুখের কালো দাগ দূর ও মুখ হালকা করে
- পাম তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের শেষকথা
পাম তেলের পরিচিতি
পাম তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার আগে জেনে নেই পাম তেল সম্পর্কে। অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে পাম তেল আবার কি? কোথা থেকে উৎপাদন হয়। চলুন তাহলে তাদের মনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক। পাম তেল মূলত রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পাম গাছ থেকে মূলত পাম তেল পাওয়া যায়। এই পাম গাছ সাধারণত আফ্রিকার মহাদেশে বেশি দেখা যায়।
পাম গাছ দুই থেকে তিন বছরের মাথায় ফলন দেওয়া শুরু করে। পাম গাছে যখন ফল ধরে তখন সেই ফল থেকে পাম তেল উৎপন্ন করা হয়। পাম ফল থেকে পাম তেল উৎপাদন করা খুব সহজ পদ্ধতি এটা মেশিন বা হাত দিয়ে পাম ফল থেকে খুব সহজেই পাম তেল বের করা সম্ভব। হাত দিয়ে পাম তেল বের করার জন্য প্রথমে পাম ফলটি সিদ্ধ করে নিতে হবে পরে হাতে নিয়ে একটু চাপ দিলেই দেখবেন তেল বের হওয়া শুরু করেছে।
পাম তেল সাধারণত লাল হয়ে থাকে কিন্তু পরবর্তীতে এটাকে প্রক্রিয়াজাত সাদা তেলে রূপান্তর করা যায়। তবে পাম তেল সবসময় দেখতে লাল হয়ে থাকে কেননা পাম তেলে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন থাকে।
পাম তেলের পুষ্টিগুন
পাম তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার আগে পাম তেলের পুষ্টি গুন সম্পর্কে জানতে হবে। পাম তেল হলো প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট/চর্বি জাতীয় ভোজ্য তেল। তবে পাম তেলের পুষ্টিগুণ অনেক। পাম তেলে রয়েছে চর্বি ও ক্যালরি পুষ্টি উপাদান। শরীরের যদি চর্বি চাহিদা কম থাকে তাহলে পাম তেল খাওয়া উপকারী। অন্যদিকে পাম তেল খাওয়ার ফলে শরীরের প্রোটিন ও খনিজের চাহিদা পূরণ হয় না তেমন । শুধুমাত্র শরীরে চর্বির চাহিদা কম তারাই পাম তেল খেলে উপকারিতা পাবে। অন্যদিকে পাম তেলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি যুক্ত থাকে।
পাম তেল খেলে শরীরের ক্যালরি চাহিদা পূরণ হয় তবে বেশি পাম তেল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা শরীরের ফ্যাটের মাত্রা বাড়াতে পারে পাম তেল। তাই স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পরিমাণ মতো পাম তেল অবশ্যই খেতে হবে। অন্যদিকে পাম তেলে ভিটামিন ই থাকার কারণে ত্বকের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। তার পাশাপাশি ত্বককে রক্ষা করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে পাম তেল সাহায্য করে।
পাম তেলের উপকারিতা
পাম তেল শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শরীরের পুষ্টি যোগাতে পাম তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে তাছাড়া শরীরে ফ্যাটের চাহিদা পূরণ করে পাম তেল। ভিটামিন ই ও ক্যালরি চাহিদাও পূরণ করে পাম তেল। তবে পাম তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার আগে জেনে নেই পাম তেলের উপকারিতাঃ
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেঃ পাম তেলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই বিদ্যামান। আর ভিটামিন ই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ব্যাপক সহায়ক।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেঃ যেহেতু পাম তেলে ভিটামিন ই বিদ্যমান ।সেহেতু ভিটামিন ই শরীরের হার্টের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেঃ চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পাম তেল খাওয়া উত্তম। কেননা পাম তেলে ভিটামিন এ বিদ্যামান। আর ভিটামিন এ চোখের রেটিনা ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে।
কোলেস্টারের মাত্রা ঠিক রাখেঃ পাম তেল খাওয়ার ফলে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকে। কেননা পাম তেল শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনে এবং উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ পাম তেল খাওয়ার ফলে ক্যান্সার শরীরের কোষ কলাকে আহত করতে পারে না। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে পাম তেল খাওয়া উত্তম।
চুলের যত্নেঃ চুলের যত্নে পাম তেল ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায় । চুল ঠিক রাখতে পাম তেল মাথায় দেওয়া ভালো এতে মাথার ত্বক ভালো থাকে এবং চুল পরিষ্কার রাখে।
ত্বক ঠিক রাখতেঃ ত্বক ঠিক রাখতে ব্যবহার করতে পারি পাম তেল এতে ত্বক অনেক সতেজ থাকে।
পাম তেলের অপকারিতা
পাম তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে হলে অবশ্যই জানতে হবে পাম তেলের অপকারিতা। পাম তেল শরীরের জন্য অনেক উপকারী। পাম তেল শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে অন্যদিকে ফ্যাটের বা চর্বি চাহিদা পূরণ করে থাকে। কিন্তু সবকিছুরেই একটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে ঠিক তেমনি পাম তেলের কিছু অপকারিতা আছে। চলুন জেনে নেই, পাম তেলের অপকারিতা গুলোঃ নিয়ম মেনে আপনি যদি পাম তেল না খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা একটু বেড়ে যেতেই পারে।
দীর্ঘদিন ধরে পাম তেল খাবার ফলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে পাম তেল হার্টের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে কিন্তু পরিমানে তুলনায় বেশি পাম তেল খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেহেতু পাম তেলে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি সেহেতু যাদের শরীরে ফ্যাট বেশি তারা অবশ্যই পাম তেল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা পাম তেল খাওয়ার ফলে শরীরের চর্বির চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে শরীরের হৃদরোগের ঝুঁকি যখন বেড়ে যাবে তখন আপনার স্টোক হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। তাই অতিরিক্ত পাম তেল খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। আপনি যদি পাম তেল পরিমাণ মতো খেতে পারেন তাহলে উপরোক্ত রোগগুলো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। পাম তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম নিচে আরো জেনে নেব পাম তেল কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই সম্পর্কে।
পাম তেল খাওয়ার ও ব্যবহারের নিয়ম
রান্নার সব সময় আমরা তেল ব্যবহার করে থাকি। রান্নার ক্ষেত্রে সরিষার তেল বা সয়াবিন তেল বেশি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই রান্নায় আমরা পাম তেল দিয়েও করতে পারি। পাম তেল দিয়ে রান্না করলে রান্না স্বাদ একটু বেড়ে যায় তাই সপ্তাহ ৭ দিনে এক বেলা হলেও পাম তেল দিয়ে রান্না করা তরকারি খাওয়া উচিত।
অন্যদিকে পাম তেল মাথায় দিতে পারি এতে চুল পরিষ্কার হয় এবং তার সাথে মাতা শীতল রাখতে সাহায্য করবে। আমরা বাসায় বিভিন্ন ধরনের আচার বানিয়ে থাকি এই আচারে পাম তেল মাখিয়ে রাখলে আচারের স্বাদ অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়াও বাসায় তৈরি সালাতের উপর পাম তেল দিয়ে ভালো করে মেখে নিয়ে সালাত তৈরি করতে পারি।
এভাবে সালাত খেলে অনেক স্বাদ পাওয়া যায় এবং শরীরের পুষ্টি চাহিদা যোগায়। তাছাড়াও রুটি তৈরি করার সময় আটা যখন রুটির জন্য প্রস্তুত করি তখন পাম তেল দিয়ে প্রস্তুত করতে পারি এতে রুটির গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। কোন না কোন খাবারের সঙ্গে আমরা মাখন ব্যবহার করে থাকি তবে মাখন এর থেকে যদি পাম তেল ব্যবহার করে থাকি তাহলে তার শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
অন্যদিকে মাছ ও মাংস রান্না করার সময় পাম তেল দিয়ে মাছ ও মাংস ভালো করে মেখে নিয়ে রান্না করতে পারি। এতে মাছ ও মাংস আলাদা স্বাদ চলে আসে আর এভাবে পাম তেল খেলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না । তবে অবশ্যই আপনি নিয়ম মেনে পাম তেল ব্যবহার করবেন এবং খাবেন।
পাম তেল কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
পাম তেল খেলে অনেক উপকার হয় তবে বেশি পরিমাণে পাম তেল খেলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিছু দিক আছে। পাম তেল কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই প্রশ্নের উত্তরটা এভাবে দেওয়া যেতে পারে যে, অতিরিক্ত পাম তেল খেলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কেননা পাম তেলে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি তাই নিয়মের বাইরে যদি আপনি পাম তেল খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।আর এই হৃদরোগের কারণে আপনার অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক এবং স্টোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়াও যাদের শরীরে আগে থেকেই ফ্যাটের পরিমাণ বেশি তারা অবশ্যই পাম তেল খাওয়া পরিহার করবেন কেননা পাম তেল শরীরের চর্বির চাহিদা পূরণ করে থাকে।
পাম তেল ও সয়াবিন তেলের মধ্যে পার্থক্য
পাম তেল ও সয়াবিন তেলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে স্বাদ এবং গন্ধে। কেননা পাম তেলে একটা খুশবু থাকে যেটা সয়াবিন তেলে থাকে না। পাম তেল যেহেতু পাম গাছের ফল থেকে উৎপাদন করা হয় সেজন্য এর একটা আলাদা নির্দিষ্ট ঘ্রাণ আছে কিন্তু সয়াবিন তেল অনেক প্রক্রিয়াজাত করার কারণে এর ঘ্রাণ ঠিক ততটা থাকে না।
অন্যদিকে পাম তেল ব্যবহারে রান্নার যে স্বাদ বাড়িয়ে দেয় কিন্তু সয়াবিন তেল ব্যবহারে রান্নার স্বাদ ততটা বাড়িয়ে দেয় না। পাম তেল দেখতে লালচে রঙের হয়ে থাকে কিন্তু সয়াবিন তেল দেখতে ফ্যাকাসে হলুদ রঙের। পাম তেল ও সয়াবিন তেল উভয়ে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসতেছে। পাম তেল দিয়ে রান্না করলে রান্নার যেন আলাদা একটা স্বাদ বা গন্ধ পাওয়া যায়।
পাম তেল কি মুখের কালো দাগ দূর ও মুখ হালকা করে
পাম তেল ব্যবহার ত্বককে সূর্যের আলোর ক্ষতিকারক ইউভি রশ্নি থেকে রক্ষা করে। ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে অন্যদিকে ত্বকের কোন ক্ষতস্থান যদি থাকে তাহলে সেটা নিরাময় করতে কিছুটা সাহায্য করে। ত্বকের কালো দাগ বা হালকা কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকে রাখে সতেজ এবং কোমল। ঠিক এভাবে পাম তেল মুখ হালকা করে।
আপনি যদি ভালো করে মুখটি ধোয়ার পর পাম তেল দিয়ে মুখটি ম্যাসাজ করে নিতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার মুখ থেকে কালো দাগ আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাচ্ছে এবং মুখের ত্বক অনেক মসৃণ হচ্ছে। এভাবে যদি আপনি পাম তেল ব্যবহার করেন তাহলে মুখের কালো দাগ দূর হবে সাথে সাথে আপনার মুখের ত্বক মসৃণ ও কোমল হবে।
পাম তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের শেষকথা
পাম তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। নিয়ম মেনে পাম তেল খেলে শরীরের জন্য তা ক্ষতিকর না হয়ে উপকারী হবে। কেননা পাম তেল ভিটামিন চাহিদা পূরণ করে থাকে। তাছাড়াও পাম তেল শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রার ঠিক রাখে। তবে আমার পরামর্শ এটাই যে, অবশ্যই আপনি পাম তেল নিয়ম মেনে খাবেন।
কেননা পাম তেল অতিরিক্ত খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। এরকম আর্টিকেল সবার আগে পেতে ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url