শিমুল মূলের ১৬টি উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন

শিমুল মূলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। শিমুল মূলের উপকারিতা জানতে পারবেন তার সাথে শিমুল মূল কাঁচায় খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন।
শিমুল-মূলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানুন১
শিমুল গাছ যেমন পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ঠিক তেমনি শিমুল গাছের মূল শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করে থাকে। তা ছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে শিমুল মূলের গুরুত্ব অপরিসীম।

পোস্ট সূচিপত্রঃ শিমুল মূলের উপকারিতা ও অপকারিতা

শিমুল মূলের উপকারিতা ও অপকারিতা

শিমুল মূল শরীরের জন্য অনেক উপযোগী। শরীরের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিমুল মূলের ভূমিকা তুলনাহীন। শিমুলের ফুল যেমন দেখতে সুন্দর ঠিক তেমনি যেন শিমুলের মূল শরীরের রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। শিমুল গাছ সচরাচর রাস্তার পাশে অথবা বাড়ির পাশে দেখা যায়। অযত্নে পড়ে থাকা এই গাছটি যে পরিবেশ রক্ষা করে তার সাথে এর কিছু ঔষধি গুন শরীরের রোগ সারাতে সাহায্য করে। 

শিমুলের তুলা যেমন আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি শরীরের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিমুল মূল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে শিমুল মূল ব্যবহারের আগে জানতে হবে শিমুল মূল কিভাবে ব্যবহার করলে শরীরের জন্য তা কার্যকরী। তা না হলে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শরীরের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। 

তাছাডাও শিমুল গাছের বাকল থেকে শুরু করে মূল পর্যন্ত সবকিছুই ভেষজ ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে শিমুল মূলের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক।

শিমুল মূলের ১৬টি উপকারিতা

শিমুল মূলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার আগে জেনে নেই শিমুল মূলের উপকারিতা। আপনি জানলে অবাক হতে পারেন যে, বাড়ির পাশে থাকা শিমুল গাছটি আপনার শরীরের স্বাস্থ্যের কত উপকারে আসতে পারে। হ্যাঁ শিমুলের মূলে রয়েছে অনেক গুণ। কেননা শিমুলের মূল শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান হতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, শিমুল মূলের উপকারিতা গুলোঃ

আমাশয় রোগেঃ আপনি যদি শিমুলের মূল গুড়া করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে  যদি আমাশয় রোগ থেকে থাকে তাহলে সেখান থেকে পরিত্রাণ পাবেন। অন্যদিকে শিমুলের মূল রক্ত আমাশয় সাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে।

ডায়রিয়া রোগ সাড়াতেঃ শরীরের ডায়রিয়া রোগ সারাতে শিমুল মূলের বা শিকড়ের কার্যকারিতা অনেক। আপনি যদি শিমুল মূল নিয়ম মেনে খেতে পারেন তাহলে আপনার ডায়রিয়ার রোগ সারাতে সাহায্য করবে।

ফোরার ব্যথা থেকে মুক্তিঃ অনেক সময় শরীরের অজান্তে অনেক ধরনের ছোট ছোট ফোড়া দেখা যায়। যেগুলা অনেক সময় ব্যথার কারণ হয়। আর এই ব্যথা দূর করার জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন শিমুলের মূল।

সর্দি ও কাশি সাড়াতেঃ শরীরের সর্দি ও কাশি সাড়াতে গেলে আপনি বিভিন্ন ধরনের ঔষধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু আপনার বাড়ির পাশে থাকা শিমুলের মূল খাওয়ার মাধ্যমে সর্দি ও কাশি সারাতে পারবেন খুব সহজেই।

মেছতা দূর করতেঃ শরীরের মেছতা দূর করার জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে শিমুল গাছের মূল বা শিকড়।

পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করতেঃ অনেক সময় পেটের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সেই সমস্যা দূর করার জন্য খাওয়া যেতে পারে শিমুলের মূল।

গর্ভবতী মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতেঃ গর্ভবতী মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে। আপনি খাদ্য তালিকায় শিমুল মূল খেতে পারেন।

ত্বকের ব্রণ দূর করতেঃ ত্বকের মধ্যে ব্রণ একটা অস্বস্তিকর ব্যাপার। আর আপনি এটা দূর করতে পারেন শিমুল গাছের মূলের মাধ্যমে।

ত্বকের কালো দাগ এবং দাগছোপ দূর করতেঃ অনেক সময় ত্বকের মধ্যে কালো দাগ অথবা ছোট ছোট দাগ দেখা যায় এই দাগ দূর করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে শিমুল গাছের মূল।

শরীরের পুষ্টি যোগাতেঃ অনেকেই অপুষ্টিতে ভোগে। কিন্তু শিমুল মূল খাবার মাধ্যমে আপনি আপনার শরীরের পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করবে।

ক্ষতস্থান সাড়াতেঃ শরীরের ক্ষতস্থান সারাতে ব্যবহার করা যেতে পারে শিমুল মূলের রস বা গুঁড়া। এতে করে ক্ষতস্থানের ব্যাথা থেকে কিছুটা আরাম পাওয়া যায় এবং এটা নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে শরীরের ক্ষতস্থান আস্তে আস্তে দূর হয়ে যায়।

পুরুষের শারীরিক সমস্যা দূর করতেঃ পুরুষের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দূর করতে শিমুল গাছের মূল ব্যাপক সহায়ক।

শরীরের রক্ত পরিষ্কারেঃ শরীরের রক্ত পরিষ্কার এ শিমুল মূল কাজ করে থাকে। তাই অবশ্যই রক্ত পরিশোধনের জন্য একবার হল শিমুল মূল খাওয়া প্রয়োজন।

শরীরের পিপাসা দূর করতেঃ শরীরের যাদের অতিরিক্ত পিপাসা লাগে অথবা কিছুক্ষণ পর পর পানি খেতে ইচ্ছে করে তাদের জন্য শিমুল মূল অনেক উপকারী।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনেঃ শরীরের সুগারের মাত্রা অনেক সময় বৃদ্ধি পেয়ে যায়। শরীরের ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে শিমুলের মূল।

শরীরের পেশি শক্তিশালীতেঃ শিমুল মূল খাওয়ার পর শরীরের সকল পেশীর মধ্যে শক্তি সঞ্চয় হয়। এবং পেশিগুলোর কার্যকারিতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

শিমুল মূল খাওয়ার নিয়ম

আপনি যদি শিমুল মূলের সম্পূর্ণ গুনাগুন নিতে চান এবং শিমুল মূলের উপকারিতা আপনি পেতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে শিমুল মূল নিয়ম মেনে খেতে হবে। আর আপনি যদি নিয়ম মেনে শিমুল মূল খেতে পারেন তাহলে এর কার্যকারিতা গুলো আপনার শরীরে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করবে। তাই শিমুল মূল খাওয়ার আগে শিমুল মূল কিভাবে খেতে হয়। 
শিমুল-মূলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানুন২
কিভাবে খেলে তার শরীরের জন্য উপকারী এটা অবশ্যই জানা আবশ্যক। আসলে আপনি কোন রোগের জন্য শিমুল মূল খাবেন সেটা আপনাকে প্রথমে ভাবতে হবে। আপনি যদি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে শিমুল গাছের মূল তুলে এনে সেটা পরিষ্কার করে চূর্ণ করে নিতে পারেন অথবা গুড়া করে নিয়ে দুধের সঙ্গে(ছাগলের দুধ হলে ভালো হয়) মিশিয়ে খেতে পারেন।

অন্যদিকে আপনি শিমুল মূল রান্না করেও খেতে পারেন এতেও বেশ উপকার পাবেন। শরীরের শারীরিক সমস্যা দূর করার জন্য শিমুলের মূল গুড়া করে নিয়ে দুধের সঙ্গে খেতে পারবেন কিন্তু মনে রাখবেন দুধের মধ্যে সামান্য পরিমাণে চিনি মিশিয়ে খেতে হবে। এতে করে আপনার শরীরের শারীরিক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। অন্যদিকে আপনি শিমুল মূল গুড়া করে মধুর সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। 

যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাছাড়াও আপনি কোন কচি শিমুল গাছের মূল তুলে সেটা সকালে চিবিয়ে খেতে পারেন। এভাবে খেলেও শরীরের রোগ দূর করতে সাহায্য করবে। আপনি যদি শিমুল মূল তুলে এনে সেটা থেতলে রস বের করে সেই রসের সাথে কিছু পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের কাশি দূর হয়ে যাবে। তাই শিমুল গাছের মূলের উপকারিতা পাওয়ার জন্য আপনি অবশ্যই নিয়ম মেনে শিমুল গাছের মূল খাবেন।

শিমুলের ছাল এবং মূলের ব্যবহার

শিমুল মূল খাবার নিয়ম সম্পর্কে আপনি জানলেন। চলুন জেনে নেই, শরীরের স্বাস্থ্য রক্ষায় শিমুল মূলের ও ছালের ব্যবহার সম্পর্কে। শিমুল মূল খাওয়ার উপকারিতা অনেক কিন্তু শরীরে শিমুল মূল্যের রস বা গুড়া পেস্ট করে লাগালে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যায়। শরীরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ফোড়া হয় এই ফোঁড়ার ব্যথা খুবই যন্ত্রনাদায়ক। 

এই ব্যথা দূর করার জন্য আপনি শিমুল মূল গুড়া করে ফোড়ার স্থানে লাগাতে পারেন। এতে করে আপনি ফোড়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন এবং ব্যথা নিরাময় হবে। ত্বকের মধ্যে অসংখ্য ব্রণ এবং এই ব্রণ দূর করতে ব্যবহার করা যেতে পারে শিমুলের মূল। সেজন্য আপনাকে প্রথমে শিমুলের ছাল থেতলে নিয়ে রস বের করতে হবে। পরবর্তীতে সেই রস ব্রণের উপর লাগাতে হবে। 

আপনি যদি এই নিয়ম কিছুদিন ব্রণের ওপর প্রয়োগ করেন। তাহলে দেখবেন আপনার শরীর থেকে ব্রণ যেন দূর হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়াও যদি শিমুলের ছাল রস করে নিয়ে শিমুল গাছের ফল থেকে তুলোটা বের করে সেই তুলোর মধ্যে সেই ছালের রস দিয়ে ঘা যুক্ত স্থানে লাগিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার ঘায়ের ব্যথা এবং ঘা দুটোই সেড়ে যাচ্ছে। 

অন্যদিকে শরীরের মেছতা দূর করার জন্য আপনি শিমুলের কাটা ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে শিমুলের কাটা বেটে রস বের করে নিতে হবে সেই রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে আপনার মেছতা হওয়া স্থানে লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরের মেছতা দূর হয়ে যাবে। আর এভাবে আপনি যদি নিয়ম মেনে শিমুলের মূল বা ছাল ব্যবহার করতে পারেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন।

শিমুল মূল কাঁচায় খেলে কি হয়

অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে শিমুল মূল কাঁচায় খেলে কি হয়। আপনি যদি শিমুল মূল কাঁচায় খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে প্রোটিন ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হবে। তার সাথে আপনার শরীরের খনিজ উপাদানের ঘাটতি পূরণ করে। কেননা শিমুল মূলে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও খনিজ উপাদান। 

আপনি যদি শিমুল মূল কাঁচায় খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ভিটামিন সি যথেষ্ট। আর এই ভিটামিন সি শিমুল মূল এর মধ্যে বিদ্যামান। অন্যদিকে ভিটামিন এ যা শরীরের দৃষ্টি শক্তি প্রখর করতে এবং রাতকানা রোগের হাত থেকে বাঁচাতে রক্ষা করে। 

 আপনি যদি শিমুল মূল কাঁচায় খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরের ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ হবে এবং আপনার দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়াও শিমুল মূল যদি কাঁচায় খাওয়া যায় তাহলে পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। আর এই হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে শিমুল মূলে থাকা খনিজ উপাদান ফাইবার। ঠিক সেইভাবে আয়রন শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করে। 

আর শিমুলের মূলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে আয়রন। তাছাড়াও শিমুল মূলে থাকা বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান শরীরের ব্যথা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে। তাই শিমুল মূল কাঁচায় খাওয়া অনেক উত্তম। যা শরীরের জন্য অনেক উপযোগী এবং কার্যকারী।

শিমুল মূল কাঁচায় খাওয়ার নিয়ম

শিমুল মূল কাঁচায় খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাছাড়াও শিমুল মূল আপনি যদি সঠিক নিয়মে খেতে পারেন তাহলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তার সাথে স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে। তবে আপনাকে শিমুল মূল কাঁচায় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে আপনি কাঁচা শিমুল মূল খেলে উপকার পাবেন। 

আপনি যদি কাঁচা শিমুল মূল খেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রথমে কোন শিমুল গাছ(যেন গাছটি বেশি পরিপক্ক না হয়) এমন গাছ থেকে মূল নিয়ে আসতে হবে। মূলটা নিয়ে আসার পর সেটাকে ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। আপনার পরিষ্কার করা শেষ হলে আপনি মূলটি ছোট ছোট বিভিন্ন অংশে কেটে নিতে পারেন। 

তাতে আপনার মূলটি খেতে অনেক সুবিধা হবে। এখন আপনি কাঁচা শিমুল মূলটি চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরে ভিটামিনের চাহিদা এবং তার সাথে খনিজ উপাদানের চাহিদা পূরণ হবে। কিন্তু আপনি যদি মূলটি কাঁচায় এভাবে খেতে না পারেন। তাহলে মূলটি পানির সাথে সিদ্ধ করে খেতে পারেন। এতে করেও আপনি বেশ উপকার হবে। তবে শিমুল মূলটি কাঁচায় যদি আপনি সকালে খেতে পারেন তাহলে বেশি কার্যকারী। তাই নিয়ম মেনে প্রতিদিন কাঁচা শিমুল মূল চিবিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো।

শিমুল মূল পাউডার করে খাওয়ার উপকারিতা

আপনি যদি শিমুল মূল পাউডার করে খেয়ে থাকেন তাহলে বিভিন্ন ধরনের উপকার পেয়ে যাবেন। কেননা শিমুল মূলের পাউডারে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস,আয়রন ও ফাইবার বিদ্যমান। আর এই উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। অনেকেরই শরীরে দৃষ্টিশক্তির বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। 

যেমন রাতে একটু ঝাপসা দেখে এই সমস্যা সমাধানে আপনি শিমুলের মূল পাউডার খেতে পারেন। তাছাড়াও শিমুলের পাউডার শরীরের প্রোটিনের চাহিদা বা প্রোটিনের উৎস হিসেবে আপনি দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। শিমুল মূলের পাউডার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ করে। 

যাদের পেটের হজমের সমস্যা বা পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এই সমস্যা দূর করণে খেতে পারেন শিমুল মূলের পাউডার। রক্তের স্বচ্ছতা এবং হিমোগ্লোবিন মাত্রা বৃদ্ধি করে। তাছাড়াও পুরুষ এবং মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার দূর করতে সক্ষম। শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নিরাময়ের জন্য কাজ করে থাকে এই পাউডার। তাই শরীরের স্বাভাবিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য অবশ্যই শিমুল মূলের পাউডার খাওয়া প্রয়োজন।

শিমুল মূল পাউডার করে খাওয়ার নিয়ম

আপনি বাসায় তৈরী করে অথবা বাজার থেকে কিনে এনে খুব সহজে শিমুল মূলের পাউডার খেতে পারবেন। তবে শিমুল মূলের পাউডার কীভাবে খেলে শরীরের জন্য তা কার্যকর এই নিয়মটা জানতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেই শিমুল মূল পাউডার করে কিভাবে খাওয়া যেতে পারে। আপনি বাসায়ও বসে থেকে শিমুল মূলের পাউডার তৈরি করতে পারবেন। 

তবে আপনাকে এক্ষেত্রে একটি শিমুল গাছ থেকে মূল তুলে এনে সেটা পরিষ্কার করে ছোট ছোট অংশ করতে হবে এবং রোদে শুকাতে দিতে হবে। শিমুল মুল শুকিয়ে গেলে সেটা গুড়া করে অথবা চূর্ণ করে আপনি পাউডার হিসেবে খেতে পারেন। তবে আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে এই পাউডার এক বা দুই চামচ খেতে পারেন তাহলে বেশ উপকার পাবেন। 

আপনার বাসায় যদি দুধ না থেকে থাকে তাহলে চিন্তার কোনো কারন নেই। আপনি কিছু পরিমাণ পানি গরম করে নিয়ে সেই পানির সাথে পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন। অন্যদিকে রুটির আটার সাথে মিশিয়ে রুটি তৈরি করেও এই পাউডার খাওয়া যেতে পারে। বেশি ভালো হয় আপনি যদি এই পাউডার নিয়ম মেনে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন দিনে দুইবারের বেশি এই পাউডার খাওয়া উচিত নয়।

খালি পেটে শিমুল মূল খেলে কি হয়

আপনার মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে খালি পেটে শিমুল মূল খেলে কি হয়? চলুন তাহলে আপনার মনের এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক-আপনি যদি খালি পেটে শিমুল মূল খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের শারীরিক সমস্যা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিমুল মূল কাজ করে থাকে। পুরুষ ও মহিলারা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভোগে। 
শিমুল-মূলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানুন৩
এই সমস্যা দূর করতে শিমুল মূলের পাউডার অবশ্যই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া উচিত। অন্যদিকে পেটের যে হজমের সমস্যা বা পচনের সমস্যা এটা দূর করার জন্য অবশ্যই খাওয়ার আগে শিমুলের মূল খেতে হবে। তাহলে আপনার পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। ত্বকের সুস্থতার জন্য অথবা ত্বকের ব্রন দূর করার জন্য আপনি খালি পেটে শিমুলের মূল পাউডার করে খেতে পারেন। 

তাছাড়াও সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি যদি শিমুলের মূল চিবিয়ে খেতে পারেন। তাহলে আপনার শরীরের প্রোটিন ও খনিজ উপাদানের যোগান পাবেন। তবে অবশ্যই প্রয়োজনের বেশি শিমুল মূল খালি পেটে খাওয়া উচিত না। আমার পরামর্শ এটাই যে, খালি পেটে শিমুল মূল খাওয়ার আগে আপনি অবশ্যই কতটুকু শিমুল মূলের পাউডার এবং শিমুলের মূল খেলে আপনার শরীরের জন্য তা উপকারী। সেই সম্পর্কে আপনি আগে অবগত হবেন। তারপর যতোটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু পরিমাপে খালি পেটে শিমুলের মূল এবং পাউডার খাবেন।

শিমুল মূলের অপকারিতা

আপনি শিমুল মূলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে এসেছেন। শিমুলের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জেনে গেছেন। চলুন তাহলে জেনে নেই, শিমুল মূলের অপকারিতা সম্পর্কে-কথায় আছে প্রয়োজনের বেশি আপনি যদি কোন কিছু অতিরিক্ত ব্যবহার করে থাকেন অথবা খেয়ে থাকেন তাহলে তার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আপনার শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। 

ঠিক তেমনিভাবে শিমুল মূল শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী হলেও এর অধিক ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। আপনি যদি শিমুল মূলের পাউডার অতিরিক্ত পরিমাপে অথবা দিনে দুইবারের বেশি খেয়ে থাকেন তাহলে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। কেননা দিনে দুইবারের বেশি খেলে শিমুল মূলের পাউডারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আপনার শরীরে দেখা দিতে পারে। 

অনেকের শরীরে স্বাস্থ্য বা সমস্যা দূর করতে এটা কার্যকর নাও হতে পারে। তাছাড়াও সকালে খালি পেটে শিমুল মূল চিবিয়ে খেলে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতেও পারে। তাই প্রয়োজন অনুসারে আপনাকে নিয়ম মেনে সকালে খালি পেটে শিমুলের মূল খেতে হবে। যাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা নেই তারা অবশ্যই শিমুল মূল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। 

অন্যদিকে যারা শিমুল মূল খেতে ভালোবাসেন না তার অবশ্যই শিমুল মূল খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। কেননা তাদের শরীরের সঙ্গে শিমুল মূলের পাউডার অথবা শিমুল মূল খাপ খাইয়ে নাও নিতে পারে। এতে করে তাদের শরীরের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমার পরামর্শ এটাই যে, শিমুল মূল খাওয়ার তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা নেই। কিন্তু তবুও আপনি শিমুল মূল নিয়ম মেনে ব্যবহার করবেন এবং খাবেন। শিমুল মূলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।

শিমুল মূলের পাউডার বা চূর্ণ দাম কত

কোন কিছু দাম এককালীন ভাবে ঠিক থাকে না। হয়তোবা প্রয়োজনে সেটা একটু বেড়ে যায় আবার প্রয়োজনে সেটা একটু কমে যায়। অর্থাৎ বাজারজাত করার ওপর শিমুল মূলের পাউডার বা চূর্ণের দাম নির্ভর করে। অন্যদিকে এই দামটা নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের কোম্পানির উপর। অর্থাৎ শিমুল মূলের পাউডার বা চূর্ণ যত গুণগতমান সম্পূর্ণ হবে দাম তত একটু বেশি পড়বে। 

অন্যদিকে এটা বাজার প্রক্রিয়া হওয়ার কারণে এর দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। তবে শিমুলের পাউডার বা চূর্ণের দাম সচরাচর ১০০ গ্রাম জন্য ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধতা থাকে। কিন্তু বাজার পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় এর দাম একটু বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে সচরাচর শিমুল মুলের পাউডার বাজারে দেখা যায়। তাই বলা যেতে পারে, বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় শিমুল মূলের পাউডারের দাম পরিবর্তন এবং অপরিবর্তনশীল থাকতে পারে।

শিমুল মূলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের শেষকথা

শিমুল মূলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলাম এবং তার সাথে আরও জানলাম শিমুল মূল কাঁচায় খেলে কি হয়। শিমুল মূল শরীরের জন্য অনেক স্বাস্থ্যসম্মত তাছাড়াও আপনি শিমুল মূল খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। তবে আমার পরামর্শ এটাই যে, আপনি শিমুল মূল নিয়ম মেনে খাবেন। তা না হলে আপনার শরীরে স্বাস্থ্যের জন্য শিমুল মূল ক্ষতিকারক হতে পারে। 

শিমুল মূলের পাউডার খাওয়ার আগে পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিবেন। আর্টিকেলটা যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন। এরকম আরো আর্টিকেল সবার আগে পেতে এই ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url