চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার এই কথাটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কেননা যুগ যুগ ধরে চুল কানিতে নিম পাতার ব্যবহার হয়ে আসতেছে। তার সাথে আরো জানতে পারবেন চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে।
গায়ে যখন চুলকানি ওঠে তখন কোন কিছুই আর ভালো লাগেনা। কিন্তু এই চুল কানিতে নিম পাতার ব্যবহার করলে চুলকানি কমে যায়। তাই চুল কানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
নিমগাছের পরিচিতি
যুগ যুগ ধরে শুনে আসতেছি নিমগাছ হলো ঔষধি গাছ। তবে অনেকেই আমরা নিমগাছ দেখতে কেমন জানি না। চলুন চুলকানিতে নিম পাতা ব্যবহার করার আগে আমরা নিম গাছের সাথে পরিচিত হই। বাংলাদেশের সব অঞ্চলে নিমগাছ দেখা যায়। একটা নিমগাছ প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় লাগে প্রায় ১০ বছর। নিম গাছকে বলা হয় চিরহরিৎ বৃক্ষ। কেননা শুষ্ক মৌসুমে নিম গাছের পাতাগুলো শুকিয়ে ঝরে পড়ে যায়।
নিম গাছকে ঔষধি গাছ বলা হয় এর কারণ হলো নিম গাছের পাতা, ফল,বাকল সবকিছুই শরীরের জন্য উপকারী। অন্যদিকে নিমগাছের ভালো আসবাপত্র তৈরি হয়। নিম গাছ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করলে সহজে সেগুলো নষ্ট হয় না এবং অনেকদিন টেকসই দেয়। । কেননা নিমগাছে সহজে ঘূনপোকা ধরতে পারে না। পেটের কৃমি কমাতে নিম পাতার রসের ব্যবহার খুবই দেখা যায়।
নিম গাছের উপকারিতা
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানার আগে আমরা নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই। নিম গাছ শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নিম গাছের পাতা থেকে শুরু করে বাকল পর্যন্ত সবকিছুই আমরা শরীরের কোন না কোন অঙ্গের চিকিৎসার জন্য বা সুস্থতার জন্য ব্যবহার করে থাকি। চলুন জেনে নেই নিম গাছের উপকারিতা গুলোঃ
দাঁত মজবুত ও শক্ত রাখতেঃ নিমগাছে ডাল দিয়ে যদি দাঁত মাজন করা যায় তাহলে দাঁত মজবুত এবং শক্ত হয়।
পেটের কৃমি দূর করতেঃ পেটে যদি কৃমি বেড়ে যায় তাহলে নিম পাতার রস খেলে পেটে মধ্যে কৃমির উপদ্রব কমে যায়।
চুলকানি কমাতেঃ শরীরের মধ্যে চুলকানি থাকলে সেই চুলকানি কমাতে আমরা নিম পাতার ব্যবহার করতে পারি।
বুকের ব্যাথা কমাতেঃ যদি কখনো বুকের ব্যথা ওঠে তাহলে তাৎক্ষণিক বুকের ব্যথা কমানোর জন্য নিম পাতার রস খেলে কিছুটা বুকের ব্যথা কমে যায়।
উকুন নাশক হিসাবেঃ সাধারণত মেয়েদের মাথায় বেশি উকুনের বসবাস। উকুনের বসবাস ঠেকাতে আমরা নিম পাতা রস করে সেটা চুলের লাগিয়ে এক দুই ঘন্টা রাখলে চুলের মধ্যে উকুনের উৎপাত কমে যায়।
ক্ষত স্থানের ব্যাথা উপশমেঃ এক সময় শরীরে পোকামাকড়ের কামড়ের ফলে শরীরের মধ্যে ক্ষত স্থানের সৃষ্টি হয় সেই ক্ষতস্থানে যদি নিমপাতার রস দেওয়া যায় তাহলে কিছুটা ব্যাথা উপশম হয়।
ত্বকের ব্রন কমাতেঃ ত্বকের মধ্যে যদি ব্রণ উঠে থাকে তাহলে আমরা হাতের কাছে থাকা নিম পাতা ব্যবহার করে ব্রণ কমাতে পারি।
খোসপাচড়া দূর করতেঃনিম পাতা ব্যবহার করলে খোসপাচড়া দূর হয়ে যায়।
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
চুলকালিতে নিম পাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসতেছে। চুলকানিতে যদি নিম পাতার ব্যবহার করা যায় তাহলে চুলকানি কমে যায় অন্যদিকে চর্ম রোগের যদি কোন সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চুলকানিতে নিমপাতা ব্যবহার করার আগে প্রথমে নিম পাতাটা বেটে থেতলে নিতে হবে।
আমাদের শরীরের যে জায়গায় চুলকায় সেখানে দিতে হবে এবং কোন জায়গায় যদি চর্মরোগ থাকে তাহলে সে জায়গা গুলো তো লাগিয়ে দিতে হবে তাহলে দেখা যাবে কি একসাথে গায়ের চুলকানি এবং চর্মরোগ দুটায় দূর হয়ে যাবে। তবে আপনার যদি সম্পূর্ণ শরীরে চুলকানি হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে প্রথমে নিম পাতা কিছু পানির মধ্যে রেখে সেই পানিকে একটু ফুটিয়ে নিতে হবে।
ফুটিয়ে নেওয়ার পর পানিটা যখন হালকা গরম থাকবে সেই পানি দিয়ে আপনার সারা শরীরে লাগাতে হবে। তাহলে দেখা যাবে যে আপনার সারা শরীরে চুলকানি দূর হয়ে গেছে। অন্যদিকে অনেকের সর্ব শরীরে এলার্জির দেখা দেয় যখন সর্ব শরীরে এলার্জি উঠে। তখন খুব চুলকাতে ইচ্ছে করে কিন্তু চুলকানোর পর যে জায়গায় চুলকানো হয় সেই জায়গা লাল হয়ে যায় এবং অনেক সময় তো ক্ষতস্থান দেখা দেয়।
তবে যদি আপনার সর্ব শরীরে এলার্জি উঠে থাকে তাহলে তখন আপনাকে নিমপাতা পানিতে দিয়ে সেই পানি গরম করে নিতে হবে এবং পানি যখন কুসুম কুসুম গরম হবে তখন সেই পানি দিয়ে গোসল করতে হবে তাহলে আপনার শরীরের এলার্জি দূর হবে। আপনি নিম পাতা বেটেও রস করে শরীরের যে কোন জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। এতে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে সহজে কোন রোগ আপনার শরীরে আক্রমণ করতে পারবেনা।
চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা জানলাম। তবে শুধু চুলকানিতেই নিম পাতার ব্যবহার করা হয় না চুলের যত্নেও নিম পাতার ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় আমাদের মাথায় খুশকির আবির্ভাব ঘটে। যার ফলে আমাদের চুল পড়া শুরু হয়ে যায় চুলের এই খুশকি দূর করার জন্য আমরা নিম পাতার ব্যবহার করতে পারি।
প্রথমে আমাদের নিমপাতা বেটে রস বের করে নিতে হবে। তারপর এটা চুলের মধ্যে লাগিয়ে নিতে হবে শুকিয়ে গেলে ভালো করে মাথাটা ধুয়ে ফেলতে হবে। এরকম কয়েকদিন করলে চুলের খুশকি দূর হয়ে যাবে অন্যদিকে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। তাছাড়া চুলের শুষ্ক ভাব দূর করতে নিম পাতা অনেক কার্যকরী।
ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার
চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানলাম। তাহলে এবার জানবো ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে। আমরা সবাই ত্বককে মসূণ রাখতে চাই। যদি ত্বকের মধ্যে একটা ব্রণ হয় তাহলে আমাদের মনের মধ্যে প্রশ্ন উঠে যায় যে ত্বক থেকে এই ব্রণ টা কবে চলে যাবে। ত্বকের মধ্যে ব্রণ উঠলে ব্রণ সারানোর জন্য আমরা নিম পাতার ব্যবহার করতে পারি। অন্যদিকে আমাদের ত্বকে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের দাগ দেখা যায় বা সূর্যের তাপের কারণে ত্বক কালো হয়ে যায়।
ত্বকের দাগ এবং কালো ভাব দূর করার জন্য আমরা নিম পাতার রস মুখে ব্যবহার করতে পারি। মুখের মধ্যে নিমপাতা ব্যবহার করলে ত্বক সতেজ ও ফর্সা হতে সাহায্য করে। তবে ত্বকে নিম পাতা ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
নিম পাতা ব্যবহারের নিয়ম
আমরা চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানলাম। তবে নিমপাতা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। কিভাবে নিমপাতা ব্যবহার করলে শরীরের জন্য উপকার সে সম্পর্কে তো জানতে হবে। নিম পাতা বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায়। নিম পাতা থেঁতলেও আমরা মুখের মধ্যে ব্যবহার করতে পারি।
অন্যদিকে নিম পাতা একটু থেঁতলে নিয়ে সেটা চুলের যত্নেও ব্যবহার করতে পারি।পোকামাকড় যদি কামড় দেয় তাহলে সেই জায়গায় নিমপাতার একটু থেঁতলে নিয়ে লাগালে অনেকটা ব্যথা কমে যায়। নিমপাতা রস করে নিও আমরা খেতে পারি। নিমপাতা পানির মধ্যে দিয়ে সেই পানি ফুটিয়ে নিয়ে আমরা গোসল করতে পারি তাহলে শরীরে থাকা এলার্জি দূর হয়ে যাবে।
অনেকেই আবার নিম পাতার বড়ি তৈরি করে রাখে এবং সেটা পানির সাথে খেয়ে ফেলে।ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দূর করার জন্য আমরা নিমপাতার তেল তৈরি করে লাগাতে পারি। যদি চা খাওয়া অভ্যাস হয়ে থাকে তাহলে আপনি নিম পাতার চা তৈরি করেও খেতে পারেন এতে আপনার চা খাওয়া হলো শরীরের জীবাণু ধ্বংস করা হলো।
নিম পাতা খাওয়ার অপকারিতা
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানার পর অবশ্যই আমাদের জানতে হবে যে নিমপাতা খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি ? গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের নিম পাতার ব্যবহার পরিহার করতে হবে। অন্যদিকে শিশুদের কাছ থেকে নিম পাতা দূরে রাখতে হবে। শিশুদের নিম পাতা খাওয়ানোর আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
যাদের শরীরে নিম্ন রক্তচাপ আছে তারা অবশ্যই নিমপাতা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যদিকে অতিরিক্ত নিম পাতা খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন বমি বমি ভাব, কিডনির সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যা, লিভারের সমস্যা এবং হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে নিমপাতা খাবার পর শরীরের ওজন কমে যায়।
তাই যারা শরীরের ওজন ঠিক রাখতে চান তারা অবশ্যই নিমপাতা নিয়ম মেনে খাবেন। তবে নিমপাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। অতিরিক্ত নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার লেখকের শেষকথা
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার এবং চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানলাম। তাছাড়াও নিম পাতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তবে আমার পরামর্শ এটাই যে, অতিরিক্ত নিমপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নিম পাতা খাওয়ার আগে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের অবশ্যই পরামর্শ নিতে হবে।
এই এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের কে জানার সুযোগে করে দিবেন। এরকম আর্টিকেল সবার আগে পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি ফলো করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url