গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা। কচু শাকে কি এলার্জি আছে

আপনি যদি গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আরো জানতে পারবেন আপনি কচু শাক খেলে কি গলা চুলকায় এই সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থায়-কচু-শাক-খাওয়ার-উপকারিতা১
গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর শাকসবজির মধ্যে কচু শাক গর্ভাবস্থায় অনেক প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের চাহিদা মেটায়। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

কচু শাকের পরিচিত

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা জানার আগে আমাদের কচু শাক সম্পর্কে জানতে হবে। কচু শাকের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কেননা কচুর চাষাবাদ প্রাচীনকাল থেকেই করা হচ্ছে। কচুতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকার কারণে এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং খেতে অনেক সুস্বাদু। তবে বাংলাদেশে কয়েক প্রজাতি কচু দেখা যায় যেমন মুখি কচু পানি, কচু মান কচু ও ওল কচু।

এগুলোর সাথে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত কেননা এগুলো আমাদের বাড়ির পাশে বা রাস্তার পাশে সচরাচর দেখা যায়। অনেক সময় জমিতে কচু চাষাবাদ করা হয়। দোআঁশ ও এটেল মাটিতে কচুর চাষাবাদ ভালো হয়।কচু শুধু আমাদের শরীরের পুষ্টির যোগান দেয় না তার পাশাপাশি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কচুতে ভিটামিন এ থাকার কারণে আমাদের শরীরে ভিটামিন এ অভাবে যে রোগ গুলো দেখা দেয় কচু শাক খাওয়ার পর সেই রোগগুলোকে প্রতিরোধ করা যায়। অন্যদিকে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে কচু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কচু শাকে সেসকল ভিটামিন থাকে

কচু শাক যদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা যায় তাহলে আমাদের শরীরের অনেকটা পুষ্টির যোগান দেয়। গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা জানার আগে আমাদের জানতে হবে কচু শাকের মধ্যে কোন কোন ভিটামিন পাওয়া যায়। চলুন আজকে জেনে নেই, কচু শাকের মধ্যে কোন কোন ভিটামিন থাকে। কচু যেহেতু আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তাই এটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

আমাদের শরীরের খনিজের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। কচুশাকে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, লোহ,ফাইবার ও থায়ামিন থাকে । এ সকল পুষ্টি উপাদান শরীরের জন্য খুবই উপকারী । কেননা রাতকানা, ক্ষতস্থান সারাতে, হজম শক্তি বাড়াতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে এবং রক্তশূনত্য দূরীকরনে আমরা প্রতিদিন খাবারের তালিকায় কচু শাক রাখতে পারি।

কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা জানার আগে জানতে হবে একজন সাধারণ মানুষের জন্য কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা কতটুকু। কচু শাক খেলে একজন সাধারণ মানুষের কতটুকু পুষ্টির যোগান হয়। চলুন জেনে নেয়া যাক, কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা গুলোঃ

ক্ষত স্থান সাড়াতেঃ কচু শাক এ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। তাই যদি প্রতিদিনের রান্নার তালিকায় কচু শাক রাখা যায় তাহলে আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয়। আর ভিটামিন সি শরীরের ক্ষতস্থান সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কচু শাক থাকা প্রয়োজন।

দৃষ্টি শক্তি বাড়াতেঃ অনেকেরই রাতে দেখতে অসুবিধা হয় চোখ ঝাপসা হয়ে যায় অথবা দূরের জিনিস সহজে দেখতে পারে না । এই সমস্যাগুলো সাধারণত শরীরে ভিটামিন এ অভাবে হয়ে থাকে তবে যদি প্রতিদিনের রান্নায় কচু শাক রাখা যায় তাহলে আমাদের শরীরের ভিটামিন এ এর ঘাটতি পূরণ হয়। কেননা কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে।

জ্বর সাড়াতেঃ যখন শরীর প্রচুর পরিমান জ্বর উঠে তখন কচু শাক রান্না করে খেলে জ্বর অনেকটাই কমে যায় ।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতেঃ কচু খেলে শরীরের রক্ত চাপ স্বাভাবিক থাকে ।উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে।

ক্লোলোস্টরল মাত্রা ঠিক রাখতেঃ যদি রান্না করা কচু শাক খাওয়া যায় তাহলে শরীরের ক্লোলোস্টরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকা।

হজম শক্তি বাড়াতেঃ কচুতে ফাইবার থাকার কারনে হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রান্না করা কচু শাক খাওয়া প্রয়োজন।

রক্তশূনত্য দূরীকরনেঃ রান্না করা কচু শাক আছে আয়রন। যা আমাদের শরীরের রক্তশূনতার দূরীকরনে সাহায্য করে।

হাড় শক্ত করতেঃ কচু শাক খেলে আমাদের শরীরে হাড় মজবুত ও শক্ত থাকে।তাই আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় কচু শাক রাখা প্রয়োজন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ শরীর থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য আমরা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কচু শাক রাখতে পারি।

ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ ক্যান্সার প্রতিরোধে কচু শাক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকা যদি কচু শাক রাখা যায় তাহলে ক্যান্সার সহজে আক্রমণ করতে পারবে না।

হৃদরোগের চিকিৎসায়ঃ যদি নিয়ম মত কচু শাক খাওয়া যায় তাহলে আমাদের হৃদপিণ্ড ভালো থাকে অন্যদিকে স্টক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

কচু শাক খেলে একজন স্বাভাবিক মানুষের শরীরের যতটুকু পুষ্টির প্রয়োজন তার চাহিদা মেটায়। তবে গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা ব্যাপক। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। তবে কচু শাক অন্যসব সবজির থেকে গর্ভবতী মায়ের শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে অনেক সাহায্য করে। গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মা যদি প্রতিদিনের রান্নায় কচু শাক রাখেন তাহলে তার শরীরের যে চাহিদাগুলো পূরণ হয় সেগুলো নিচে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
গর্ভাবস্থায়-কচু-শাক-খাওয়ার-উপকারিতা২
  • যদি কোন গর্ভবতী মা তার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কচু শাক রাখে তাহলে গর্ভবতী মায়ের শরীরের ভিটামিন এ এর চাহিদা মেটায়। যার ফলে বাচ্চার দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য কর।
  • অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের হজমে সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু যদি রান্না করা কচু শাক খাওয়া যায় তাহলে গর্ভবতী মায়ের হজম শক্তি বেড়ে যায়।
  • গর্ভবতী মায়ের ভ্রূণের যে স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রয়োজন কচু শাক খেলে ভ্রুনের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে অন্যদিকে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের রক্তশূন্যতার দেখা দেয় কিন্তু কচু শাকে আয়রন থাকার কারণে গর্ভবতী মায়েদের রক্তশূন্যতা দেখা দেয় না তাই প্রতিদিনের রান্নায় একবার হলেও কচু শাক খাওয়া প্রয়োজন।
  • যেহেতু কচুশাক এ প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে তাই একজন গর্ভবতী মা যদি রান্না করা কচু শাক খায় তাহলে শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়।
  • কচুশাকে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে গর্ভাবস্থায় যদি কচু শাক খাওয়া যায় তাহলে সন্তানের হাড়ের গঠন মজবুত হয়।

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা যেমন আছে তেমনি কচু শাক খাবার অপকারিতাও রয়েছে। তবে অপকারিতা থেকে কচু শাক খাওয়ার উপকারিতায় বেশি। যাদের এলার্জি আছে তারা অবশ্যই গর্ভাবস্থায় কচু শাক থেকে দূরে থাকবেন। কেননা গর্ভাবস্থায় যদি আপনি কচু শাক খেয়ে থাকেন আর আপনার কচু শাকে যদি এলার্জি থেকে থাকে তাহলে আপনার শরীরে চুলকানি, চোখ লাল ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

কচু শাক খাওয়ার পর যদি আপনার শরীরে এসব লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে কচুশাকে আপনার এলার্জি আছে। তখন আপনি কচু শাক থেকে বিরত থাকুন। অনেক সময় যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ কচু শাক খেয়ে থাকেন তাহলে দেখা যায় অনেকেরই পেট ব্যাথা বা পেটে এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাই গর্ভাবস্থায় পরিমাণ মতো কচু শাক খাওয়া উচিত।

এমনটা হতে পারে কচুশাকে আপনার অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে তবে সাবধান যদি কচু শাক খাওয়ার কারণে আপনার শরীরে রক্তচাপ দেখা দেয় তাহলে আপনি কচু শাক থেকে বিরত থাকুন। তাই গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তার ও পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।

কচু শাকে কি এলার্জি আছে

অনেকের মনে এটা প্রশ্ন থেকে যায় যে কচুশাকে কি এলার্জি আছে। কচু শাক খেলে সবার এলার্জি দেখা দেয় না তবে কচুশাকে যাদের এলার্জি আছে শুধুমাত্র তাদেরই এলার্জি দেখা দেয়। তাই কচুশাকে আপনার এলার্জি আছে কিনা সেটা দেখার জন্য অবশ্যই আপনাকে কচু শাক খেতে হবে যদি কচু শাক খাওয়ার পর আপনার শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে কচু শাকে আপনার এলার্জি আছে।

চোখ ফুলে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি ওটা, ফোসকা পড়া, চোখ মুখ ফুলে যাওয়,গলায় চুলকানি হওয়া এসব লক্ষণ যদি আপনার শরীরে দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে কচুশাকে আপনার এলার্জি আছে। তখন আপনাকে কচু শাক থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে সবার ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে কিন্তু যদি কিছু কিছু লক্ষণ দেখা দেয় তা হলে আপনি কচু শাক থেকে বিরত থাকেন।কচু শাক খাওয়ার পর এলার্জি হলে অবশ্যই ডাক্তার পরামর্শ নিতে হবে।

কচু শাক খেলে কি গলা চুলকায়

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জানলাম। তবে কচু শাক খেলে কি গলা চুলকায় এ প্রশ্নটা আমাদের অনেকের মনে থেকে যায়। চলুন জেনে নেই কচু শাক খেলে কি গলা চুলকায়?হ্যাঁ কচু শাক খেলে গলা চুলকায় যদি কচু শাক আপনি ভালো করে রান্না না করেন তাহলে কচু শাক খেলে আপনার গলা চুলকাতে পারে। 

তবে কচু শাক খাওয়ার সময় যদি আপনি টক জাতীয় কিছু (যেমন লেবুর রস) দিয়ে যদি রান্না করেন তাহলে রান্না করা কচু শাক গলা চুলকার কারণ হবে না।গলা চুলকার কারন হল কচু গাছের মধ্যে কিছু রঞ্জক পদার্থ থাকে যা খাওয়ার সময় গলার মধ্যে আটকে যায় ফলে গলা চুলকায়। আর এই রঞ্জক পদার্থ নাম হল র‍্যাফাইট। তাই আমাদের কচু শাক রান্না করে খাওয়ার সময় টক জাতীয় কিছু দিলে কচু শাক খেলে কখনো গলা চুলকাবে না।

আমার শেষকথা

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা কতটুকু। আরো জানতে পারলেন কচু শাক খেলে কি গলা চুলকায় এই সম্পর্কে।একজন গর্ভকালীন মায়ের গর্ভাবস্থায় কচু শাকের গুরুত্ব অপরিসীম। শুধুমাত্র কচু শাক খেলেই গর্ভবতী মায়ের শরীরে বেশ কিছু ভিটামিন,প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয় ।

তবে অবশ্যই একটা বিষয় মনে রাখবেন, যদি কচু শাকে আপনার এলার্জি থেকে থাকে তাহলে কচু শাক পরিহার করুন।গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তার ও পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিন। এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। এরকম আরো আর্টিকেল পেতে  ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url