খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি কি জানতে চাচ্ছেন।তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানার সুযোগ করে দিতে পারে। আরো জেনে নিতে পারবেন খেলাধুলার প্রতি অনীহার কারণ গুলো সম্পর্কে।
শরীরের স্বাভাবিক গঠন ঠিক রাখতে খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। খেলাধুলা আপনার শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। খেলাধুলার উপকারিতা এবং অপকারিতা জানার জন্য এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃখেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা
খেলাধুলা কেন করা হয়
খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার আগে। জেনে নেই খেলাধুলা কেন করার হয়। এই ব্যস্ত শহরে যখন সবাই নিজেকে নিয়ে খুবই ব্যস্ত তখন নিজেকে একটু মানসিক ও শারীরিক তৃপ্তি দেওয়ার জন্য খেলাধুলা করা অবশ্যই প্রয়োজন। আপনারা কর্মক্ষেত্র , সংসার এবং বাচ্চা দেখাশোনা করা এগুলো নিয়েই সারাদিন পার করে দেন। যার ফলে আপনার মনের যে মানসিক শান্তিটুকু দরকার বা শারীরিক বিকাশের প্রয়োজন সেটা থেকে পিছিয়ে থাকেন।
তাই মানসিক শান্তি এবং শারীরিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট আপনাকে খেলাধুলার পিছনে সময় দিতে হবে। তাহলে আপনার মনের যত চিন্তা সেগুলো দূর হয়ে যাবে এবং শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। আপনারা যদি চাকরি করে থাকেন তাহলে আপনারা প্রতিদিন ভোরবেলা ৩০ মিনিট হাটাহাটি করতে পারেন। এতে আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
যদি আপনার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভোরবেলার একটু হেঁটে আসতে পারেন তাহলে আপনাদের মধ্যে একটু গল্প করার সময় পাবেন। এতে আপনার পরিবারের অন্য সদস্যের সাথে আপনার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে এবং একসাথে বা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করার মানসিকতা বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে আপনি যদি বিকেল বেলা সময় পান তাহলে অবশ্যই খেলার মাঠে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে।
সারাদিনের কর্ম ক্ষেত্রে আপনি যে ক্লান্ত থাকেন সেটাকে দূর করার জন্য খেলার মাঠে যাওয়া অনেকটাই জরুরী। এতে আপনার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এবং রাতে ঘুম ভালো হবে। তাই নিজের শারীরিক বিকাশ এবং মানসিক শান্তির জন্য অবশ্যই খেলাধুলা করা প্রয়োজন।
ছাত্র জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা
খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে হলে অবশ্যই জানতে হবে ছাত্র জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা। ছাত্ররা দেশের ভবিষ্য। নিজেকে জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করার সাথে সাথে কিভাবে একজন মানুষের সাথে কথা বলতে হয় বা ব্যবহার করতে হয় সেটা শেখার জন্য অবশ্যই খেলার মাঠে যাওয়া প্রয়োজন। একজন ছাত্র সারাদিন পড়াশোনা করার পর তার যে মানসিক চাপ পরে সেটা কমানোর জন্য খেলার মাঠে যাওয়া আবশ্যক।
একজন ছাত্র যদি ভোরে ঘুম থেকে উঠে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করে আসার পর ফ্রেস হয়ে বই পড়তে বসে তাহলে তার সেই পড়াশোনা মনে রাখার যে স্মৃতিশক্তি টুকু সেটি বৃদ্ধি পায়। ভোরবেলা হাটাহাটি করলে শারীরিক গঠন বা কাঠামো মজবুত থাকে এবং মনে একটা প্রশান্তি অনুভব হয়। ফলে পড়াশোনা করার আগ্রহটা বেড়ে যায়। অন্যদিকে একজন ছাত্রকে বিকেলে খেলার মাঠে যাওয়ার প্রয়োজন অনেক।
কেননা খেলার মাঠে গেলে বা খেলাধুলা করলে আমাদের সম্পূর্ণ শরীরের একটা ব্যায়াম হয়ে যায়। মাঠে খেলাধুলার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মানুবর্তিতা শেখে ,কীভাবে কথা বলতে বড়োদের সাথে সেটা শেখে এবং অধ্যবসায়ী হয়। সময়ের কাজ সময়ে করতে হয় সেটার জ্ঞান অর্জন করে। তাই ছাত্র-ছাত্রী মানসিক বিকাশ এবং শারীরিক বিকাশ জন্য খেলাধুলা করা অনেক প্রয়োজন।
শিশুদের জন্য খেলাধুলার উপকারিতা
প্রথমত একটি শিশু জন্মের পর থেকে তার পরিবারের কাছ থেকে সবকিছু শিখে আসে। একটু একটু করে যখন একটা শিশু ছোট থেকে বড় হয় ঠিক তখনই সেই শিশুটির শারীরিক গঠন মজবুত বা শক্ত রাখার জন্য মাঠে খেলাধুলা করা প্রয়োজন। বর্তমানে অভিভাবকরা তাদের কর্ম ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকার কারণে শিশুরা খেলার মাঠে না গিয়ে মোবাইল ফোনের দিকে ঝুকেঁ পড়তেছে।
এতে তাদের জীবনে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তেছে। একটি শিশুর শারীরিক গঠন ঠিক রাখার জন্য এবং মানসিক বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই খেলার মাঠে যাওয়ার প্রয়োজন। খেলার মাঠে গেলে শিশুটি অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হয় যার ফলে তার মধ্যে একটা বন্ধুসুলভ আচরণ দেখা দেয়। খেলার মাঠে বড়-ছোট সবার সাথে মিলেমিশে কথা বলতে হয়।
আর এভাবে একটা শিশু কিভাবে বড়দের সাথে কথা বলতে হয় বা বড়দের সম্মান করতে হয় সেই শিক্ষাটুকু নিজের মধ্যে আয়ত্ত করে নেয়। একটি শিশু তার জীবনে বাস্তব শিক্ষা থেকে কিছু অর্জন করে তাহলে সেটা সারাজীবন তারমধ্যে দেখা যায়। একটি শিশু বিকাশের পরিপূর্ণ সহায়ক হলো খেলাধুলা।তাই শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য অবশ্যই খেলাধুলা করা প্রয়োজন।
ব্যাক্তি জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা
একজন ব্যক্তির জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা কথায় আছে, সুস্থ দেহ সুন্দর মন । আপনি যদি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন তাহলে আপনার মন সুস্থ থাকবে। আর শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। আপনি সারাদিন কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততার পর নিজেকে খেলার মাঠে যদি ৩০ মিনিট সময় দিতে পারেন তাহলে আপনার শারীরিক গঠন মজবুত হবে। অন্যদিকে আপনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন। তাই দেহ মনকে সুস্থ রাখতে ব্যক্তিজীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম।
খেলাধুলার উপকারিতা
খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা মধ্যে খেলাধুলার উপকারিতা জেনে নেই। খেলাধুলা যে শরীরের জন্য কতটুকু উপকারী তা বলে শেষ করা যাবে না। খেলাধুলার মাধ্যমে আমরা আমাদের শারীরিক গঠন ও মানসিক বিকাশ ঠিক রাখতে পারি নিচে খেলাধুলার উপকারিতা ব্যাখ্যা করা হলোঃ
রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতেঃ আমরা যখন খেলাধুলা করব তখন আমাদের শরীরে রক্ত এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় প্রবাহ হতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত খেলাধুলা করা প্রয়োজন তাতে আমাদের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে।
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতেঃ প্রতিদিন হৃদপিন্ডের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পাম্প দরকার।আর খেলাধুলা করলে শরীরের হৃদপিন্ডের পাম্প নির্দিষ্ট পরিমাণে হয়ে থাকে। যার ফলে হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে।
হাড় শক্ত রাখতেঃ আমরা যদি প্রতিদিন দৌড়াদৌড়ি করি তাহলে আমাদের পেশিগুলো অনেক সচল থাকে এবং হাড় গুলোকে শক্ত ও মজবুত রাখে।
ডায়বেটিসের মাত্রা ঠিক রাখতেঃ দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন খেলাধুলা বা সকালে হাটাহাটি করলে ডায়াবেটিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ডাক্তারও ডায়াবেটিস রোগীদের হাটাহাটি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতেঃ প্রতিদিন খেলাধুলা করলে দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ প্রতিনিয়ত খেলাধুলা করলে শরীরের শারীরিক একটা ব্যায়াম হয় যার ফলে কোন রোগ সহজে আক্রমণ করতে পারে না।
উচ্চ চাপ থেকে রক্ষা করেঃ শরীরে অনেক সময় রক্তচাপ অনেকটাই বেড়ে যায় যার ফলে শরীর অসুস্থ হয়ে যায় এবং অনেক সময় মানুষ স্টক করেন। তাই রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার জন্য অবশ্যই খেলাধুলা করা প্রয়োজন।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ খেলাধুলা করলে শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মেধা শক্তি বৃদ্ধিতেঃ খেলাধুলা করলে ছাত্রছাত্রীর এবং শিশুদের মেধা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তার পাশাপাশি পড়াশোনায় অনেক মনোযোগী হয়।চলুন তাহলে জেনে জেনে নেই খেলাধুলার প্রতি অনীহার কারণ গুলো।
খেলাধুলার প্রতি অনীহার কারণ
দিন দিন খেলাধুলার প্রতি মানুষের অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে এর পিছনে কিছু কারণ আছে। খেলাধুলার প্রতি মানুষের অনীহার কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:
পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলার মাঠ না থাকাঃ নিজেদের প্রয়োজনে মানুষ এখন ফাঁকা জায়গা ফেলে না রেখে সেগুলোতে বাসা বাড়ি নির্মাণ করতেছে। এর ফলে যে ফাঁকা জায়গাগুলোয় মানুষ খেলাধুলা করতো সেগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মোবাইল আসক্তিঃ ছাত্র-ছাত্রী ও শিশুরা মোবাইলের দিকে ঝুকে পড়তেছে তারা সারাদিন মোবাইলে গেম খেলে ও ভিডিও দেখে ফলে বাসা থেকে বাইরে আসার সুযোগ তৈরি হয় না। আস্তে আস্তে তাদের খেলাধুলার প্রতি মনোযোগটা হারিয়ে যায়।
খেলাধুলার পর্যাপ্ত সামগ্রী না থাকায়ঃ খেলাধুলার পর্যাপ্ত পরিমাণ সামগ্রী না থাকার কারণে দিন দিন মাঠে খেলার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
খেলাধুলার অপকারিতা
খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা মধ্যে উপকারিতা বেশি থাকলেও আছে কিছু ক্ষতিকারক দিক। খেলাধুলা করলেই মানসিক শান্তি ও শারীরিক শান্তি দুটোই পাওয়া যায়। খেলাধুলা করলে ক্ষতির থেকে উপকারের বেশি। তবে খেলাধুলার করার কিছু নিয়ম-কানুন আছে। ধরেন, আপনি ফুটবল খেলতে ভালোবাসেন কিন্তু কিভাবে ফুটবল খেলতে হয় সেটা নিয়ম-কানুন আপনি জানেন না। আপনি ফুটবল নিয়মের বাইরে খেলতেছেন।
তখন আপনাকে বিপরীত টিমের কোন খেলোয়াড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে। এতে করে আপনি মাটিতে পড়ে গেলেন যার ফলে দেখা যাচ্ছে অনেক সময় আপনার হাত ভেঙে যেতে পারে, আপনার পা ভেঙ্গে যেতে পারে এবং আপনি শরীরে যেকোন জায়গায় আঘাত পেতে পারেন। তাই খেলাধুলা করার সময় অবশ্যই সাবধানে এবং নিয়ম-কানুন মেনে খেলতে হবে। তাহলে এটা বুঝা গেলে যে খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে।
খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা লেখকের শেষকথা
খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং তার সাথে জানতে পেরেছেন খেলাধুলার প্রতি অনীহার কারণ।আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে আপনাকে খেলাধুলা করতে হবে। খেলাধুলা করলে দেহ সুস্থ থাকে আর দেহ সুস্থ থাকলে মন সুন্দর থাকে। খেলাধুলা করার জন্য আপনার বাসার পাশে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা না থাকে তাহলে আপনি ভোরে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
এতে আপনার শারীরিক যতটুকু ব্যায়াম করা দরকার সেটা হয়ে যাবে। এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। এরকম আরো আর্টিকেল পেতে ওয়েবসাইটটি ফলো করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url